জাতীয় সমস্যা: ‘দ্বৈপায়ন’ শব্দের সন্ধি-বিচ্ছেদে অয়ন নাকি আয়ন?
হাসনাত আব্দুল্লাহ
সন্ধি-বিচ্ছেদে
26 Apr, 2025
7K views
দ্বৈপায়ন শব্দের সঠিক সন্ধি-বিচ্ছেদ হলো দ্বীপ + আয়ন। এখানে ‘আয়ন’ যুক্ত হওয়ায় আদিস্বর বৃদ্ধি পেয়ে ‘ঈ’ থেকে ‘ঐ’ হয়েছে।
‘দ্বৈপায়ন’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ নির্ণয় প্রথম আসে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায়, এর পরে বিভিন্ন পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। প্রশ্নটি বেশ দ্বিধা সৃষ্টিকারী, ফলে বেশ কিছুদিন থেকে অ্যাডমিশন থেকে বিসিএস পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অনেক বিভ্রান্ত। আসলে সঠিক কোনটি? আর কেনই বা সঠিক। আজকে ইনশাল্লাহ এই দ্বৈপায়ন-এর সন্ধি বিচ্ছেদ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করব। শুধু ‘দ্বৈপায়ন’ই না কোথায় ‘অয়ন’ আর কোথায় ‘আয়ন’ তা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। আর হ্যাঁ, সাথে তো রেফারেন্স থাকছেই!!
১ম কথা ‘দ্বৈপায়ন’ শব্দটি প্রত্যয় সাধিত শব্দ, সন্ধি সাধিত নয়। কারণ একটা কথা মনে রাখবেন, সন্ধিতে কখনোই আদিস্বর বৃদ্ধি পায় না, কেবল প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে আদিস্বর বৃদ্ধি পায়। আমাদের বাংলা ব্যাকরণে ‘অয়ন’ ও ‘আয়ন’ নামে দুটি প্রত্যয় আছে। তবে ব্যবহারে এদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে।
→ সঠিক নিয়ম: যে শব্দের সাথে (আয়ন) প্রত্যয় যুক্ত হবে, সেই শব্দের আদিস্বর বৃদ্ধি পাবে। তবে ‘অয়ন’ যুক্ত হলে আদিস্বর বৃদ্ধি পাবে না, অর্থাৎ যা থাকবে তাই হবে। আমি দুটো উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি। যেমন—
- নর + অয়ন/ আয়ন = নারায়ণ (
নরায়ণ) - উত্তর + অয়ন/ আয়ন = উত্তরায়ণ (
ঔত্তরায়ণ)
১ম প্রশ্নের ব্যাখ্যা: নর + অয়ন = নরায়ণ। লক্ষ করুন, ‘নরায়ণ’ বলে কিছু নেই, অর্থাৎ ‘অয়ন’ প্র্রত্যয় যুক্ত হয়নি। অন্যদিকে, নর + আয়ন = নারায়ণ। লক্ষ করুন, এখানে মূল শব্দ “নর”-এর ‘অ’ হচ্ছে আদিস্বর (প্রথম স্বর)। আর ‘নর’ এর সাথে ‘আয়ন’ প্রত্যয় যুক্ত করায় হয়েছে ‘নারায়ণ’, অর্থাৎ “নারায়ণ” এর ‘আ’ অ-থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ‘নারায়ণ—এর আ-তে পরিণত হয়েছে। সুতরাং ‘নারায়ণ’ শব্দে ‘আয়ন’ হয়েছে, তাই আদিস্বর বৃদ্ধি পেয়েছে।
২য় প্রশ্নের ব্যাখ্যা: উত্তর + অয়ন = উত্তরায়ণ। লক্ষ করুন, ‘অয়ন’ যুক্ত করলে কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, উত্তর + আয়ন = ওত্তরায়ণ বা ঔত্তরায়ণ। লক্ষ করুন, ‘আয়ন’ যুক্ত করলে আদিস্বর বৃদ্ধি পাবে। তাহলে আদিস্বর বৃদ্ধির নিয়মানুসারে, ‘উত্তর’-এর ‘উ’ হচ্ছে আদিস্বর (প্রথম স্বর)। আর ‘উত্তর’ এর সাথে ‘আয়ন’ যুক্ত করায় ওত্তরায়ণ বা ঔত্তরায়ণ হবে, অর্থাৎ উ/ঊ থাকলে ও/ঔ হয়। খেয়াল করুন, ওত্তরায়ণ/ ঔত্তরায়ণ বলে কিছু নেই, অর্থাৎ ‘আয়ন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়নি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নারায়ণ ও উত্তরায়ণ শব্দের বানানে ‘ণ’ হয়েছে ণ-ত্ব বিধান অনুসারে।
আপনাদের সুবিধার্থে আরো কয়েকটা উদাহরণ দেখুন।
- বৎস্য + আয়ন = বাৎস্যায়ন (
বৎস্যায়ন) - বদর + আয়ন = বাদরায়ণ (
বদরায়ণ) - বন + অয়ন = বনায়ন (
বনায়ন) - বিশ্ব + অয়ন = বিশ্বায়ন (
বৈশ্বায়ন) - রবীন্দ্র + অয়ন = রবীন্দ্রায়ণ (
রাবিন্দ্রয়ণ) - চন্দ্র + অয়ন = চন্দ্রায়ণ (
চান্দ্রায়ণ)
এবার আসা যাক—দ্বৈপায়ন-এর ঝামেলায়!— দ্বীপ + অয়ন/ আয়ন = দ্বৈপায়ন (দ্বীপায়ন)।
উপরিউক্ত আলোচনানুসারে ব্যাখ্যা: দ্বীপ + অয়ন = দ্বীপায়ন (অয়ন হলে আদিস্বর বৃদ্ধি পায় না)। লক্ষ করুন, ‘দ্বীপায়ন’ বলে কিছু নেই, অর্থাৎ ‘অয়ন’ প্র্ত্যয় যুক্ত হয়নি। অন্যদিকে, দ্বীপ + আয়ন = দ্বৈপায়ন। লক্ষ করুন, এখানে মূল শব্দ “দ্বীপ”-এর ‘ঈ’ হচ্ছে আদিস্বর (প্রথম স্বর)। আর ‘দ্বীপ’ এর সাথে ‘আয়ন’ প্রত্যয় যুক্ত করায় হয়েছে ‘দ্বৈপায়ন’, অর্থাৎ “দ্বৈপায়ন” এর ‘ঐ’ ঈ-থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ‘দ্বৈপায়ন’—এর ঐ-তে পরিণত হয়েছে। সুতরাং ‘দ্বৈপায়ন’ শব্দে ‘আয়ন’ হয়েছে, তাই আদিস্বর বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুতরাং দ্বৈপায়ন শব্দের বিচ্ছেদে ১০০% ‘আয়ন’ হবে, কোনোভাবেই ‘অয়ন’ হবে না।
আমার ব্যাখ্যা যেসব সূত্রের কাছে সফল:
- বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ।
- জ্যোতিভূষণ চাকী রচিত ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’।
- সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বাংলা ব্যাকরণ বোর্ড বই।
আমার প্রাক্তন শিক্ষর্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যারা ২০১৯ সালের আগের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাদের বলব আপনারা সবাই এখন থেকে ‘আয়ন’ দিবেন।