হিতৈষী শব্দের সন্ধি ও ‘এ মাটি সোনার বাড়া’ উদ্ধৃতির বিশ্লেষণ
হাসনাত আব্দুল্লাহ
ব্যাকরণ
06 Aug, 2025
3.1K views
গত কয়েকদিন আগে এক পাঠক ভাই (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ২টি প্রশ্ন করেছেন। নিম্নে প্রশ্ন ২টি দেওয়া হলো—
প্রশ্ন-০১:
‘হিতৈষী’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ— (হিত + এষী) না কি (হিত + ঐষী)?
প্রশ্ন-০২:
‘এ মাটি সোনার বাড়া’— এ উদ্ধৃতিতে ‘সোনা’ কোন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে?— উত্তর: বিশেষণের অতিশায়ন। কিন্তু কীভাবে এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা লাগবে, স্যার।
১ম প্রশ্নের ব্যাখ্যা ও সঠিক উত্তর:
‘হিতৈষী’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ নির্ণয় করতে গিয়ে সাধারণত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ভুল করতে দেখা যায়। যেমন: হিত + ঐষী নাকি হিত + এষী। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোনটি শুদ্ধ—
‘হিতৈষী’ শব্দের অর্থ মঙ্গল করতে ইচ্ছুক এমন। আর ‘এষা’ শব্দটির অর্থ কামনা এবং ‘এষী’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে- কামনাকারী। তবে ‘ঐষী’ বলে বাংলা ভাষায় কোনো অর্থবোধক শব্দ নেই। যেহেতু ‘ঐষী’ শব্দের অর্থ নেই, সেহেতু ‘ঐষী’ শব্দটি সাধারণভাবেই বাদ পড়বে। সুতরাং হিতৈষী = হিত + এষী। অর্থগতভাবে- হিতৈষী (হিত + এষী) শব্দের অর্থ দাঁড়ালো মঙ্গল কামনাকারী।
অতিরিক্ত তথ্য: ‘এষা’ নামক কাব্যটি লিখেছেন অক্ষয়কুমার বড়াল।
২য় প্রশ্নের ব্যাখ্যা ও সঠিক উত্তর:
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দরিদ্র উপেনের শেষ সম্বল ছিল দুই বিঘা জমি। আর এই জমিতে তাদের সাত পুরুষের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এবং এই জমিটি তার কাছে সোনার চেয়েও অধিক মূল্যবান। উপেন এবং তার বংশধরদের পুরোনো স্মৃতিতে পরিপূর্ণ এ জমি তার কাছে সোনার বা যেকোন ধন-সম্পদের ঊর্ধ্বে বোঝাতে সোনার বাড়া কথাটি ব্যবহার হয়েছে।
‘এ মাটি সোনার বাড়া’— শব্দটি খাঁটি বাংলা শব্দের অতিশায়ন। বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা ,পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে, তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। কখনো কখনো ৬ষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত শব্দে ৬ষ্ঠী বিভক্তিই চেয়ে, থেকে শব্দের কার্যসাধন করে। এখানে মাটিকে সোনার চেয়ে বড় বা মূল্যবান মনে করা হয়েছে। তাই উপরিউক্ত ‘এ মাটি সোনার বাড়া’— এ উদ্ধৃতিতে ‘সোনা’ বিশেষণের অতিশায়ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
আশা করি ব্যাখ্যা ২টি আপনি খুব সুন্দর বুঝতে পেরেছেন এবং আপনার জানার আগ্রহের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।